নৌ ডাকাত নয়ন-পিয়াস পার্শ্ববর্তী দেশে পালিয়ে গেছে, তারা ফিরলে তাদের ঠিকানা হবে কেরানীগঞ্জ কারাগারে। পুলিশের সঙ্গে গোলাগুলির ঘটনার ১২ দিন পর গত ৬ সেপ্টেম্বর মেঘনা ও গোমতী নদী বেষ্টিত মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ার গুয়াগাছিয়া ইউনিয়নের জামালপুর গ্রামে অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে প্রশ্নের জবাবে
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী উপরোক্ত ঘোষণা দেন। এতে আতঙ্কের জনপথ জেলা ও উপজেলা থেকে সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন গুয়াগাছিয়া ইউনিয়নের নিরীহ মানুষ এবং মেঘনা ও গোমতী নদী তীরবর্তী এলাকার লোকজনের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছিল।
কিন্ত স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার ওই ঘোষনার ৯৬ দিনের মাথায় আত্মগোপনে থাকা সেই নৌ-ডাকাত নয়ন-পিয়াস বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড পিয়াস সরকার গুয়াগাছিয়া ইউনিয়নের জামালপুর গ্রামে ফিরলেন ব্যান্ড পার্টির ডাক-ঢোল বাজিয়ে বহর নিয়ে বরযাত্রীর চলন স্টাইলে। এ যেনো এলাকার রাজপুত্রের পদার্পণের উৎসবমুখর আবহ!
কোনো লুকোচুরি নয়, প্রকাশ্যে দিনের বেলায় ব্যান্ড পার্টির ডাক-ঢোল বাজিয়ে ৫টি হত্যাসহ ২৫ থেকে ৩০টি মামলার আসামী পিয়াস সরকার গতকাল বৃহস্পতিবার দলবল নিয়ে নিজ গ্রামে পদার্পণের ভিডিও চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।
ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, কোনো লোকচুরি নয়, শতাধিকের বেশী লোকজনের বহর নিয়ে একাধিক ট্রলার ভিড়ল জামালপুর গ্রামে। সেই ট্রলার থেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নামলেন নৌ ডাকাত পিয়াস সরকার। শুরু হলো ব্যান্ড পার্টির ঢাক-ঢোল। এমন দৃশ্য দেখে প্রথমে যে কারোই মনে হবে, কনের বাড়ীতে বর আসলেন বরযাত্রীর বহর নিয়ে। বাস্তবে বরযাত্রীর ন্যায় নিজ গ্রামে ফিরলেন পুলিশের চোখে পলাতক থাকা নৌ ডাকাত পিয়াস সরকার। গতকাল বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) বেলা ১১টার দিকে পিয়াস সরকার, সঙ্গে বাবা মাহমুদ আলী মেম্বার ও মমতাময়ী মাকে নিয়ে ফিরলেন ৯৬ দিন পলাতক থাকার পর।
ছড়িয়ে পড়া কয়েকটি ভিডিওতে দেখা যায়, ৬;৭টি ট্রলারে করে বৃহস্পতিবার এলাকায় আসেন পিয়াস। এসময় প্রকাশ্যে লোকজনের সাথে কথোপকথন ও মিছিল করছে পিয়াস। ছিলো ব্যান্ডপার্টির বাজনা। এ সময় দেখা যায় তার সমর্থকদের উচ্ছাস ।
এদিকে এঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর শুরু হয়েছে আলোচনা সমালোচনা। কার ছত্রছায়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তোয়াক্কা না করেই এমন আয়োজনে এলাকায় ফেরার দৃশ্য সর্ব মহলে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।
অভিযোগ পাওয়া গেছে, এমন আয়োজন নিয়ে গ্রামে ফেরার আগে নয়ন পিয়াস বাহিনীর প্রশাসনিক শাখার সদস্যদের মাধ্যমে গজারিয়া থানার নবগত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার জন্য এসি ও দুই সোফা উপহার দিয়ে তারপরই গ্রামে ফিরেছে পিয়াস। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নিশ্চুপ হয়ে মুঠোফোনের সংযোগ কেটে দিয়েছেন ওসি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন জানান, বেশ ঘটা করেই এলাকায় মহড়া দিয়েছে সে। তাই আবারও নৌ-ডাকাতি সংঘটিত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে গুয়াগাছিয়ায় পিয়াস সর বাড়ির অর্ধকিলোমিটারের মধ্যে
অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প থাকলেও তাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। স্থানীয় গ্রামবাসী ও পুলিশ জানায়, এমন খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে গুয়াগাছিয়া ইউনিয়নের জামালপুর গ্রামে গিয়েছিলেন গজারিয়া থানার নবাগত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ( ওসি) মো. হাসান আলী। প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, পরিদর্শনকালে তাদের কোথাও দেখা যায়নি। শুনেছি, স্বজনের মৃত্যু বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে এসেছিলেন, ৫/১০ মিনিট থেকে আবার নৌ পথে মতলবের দিকে চলে গেছেন। তিনি দেড় দুই ঘন্টা সেখানে অবস্থান নিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে গ্রামবাসীর সঙ্গে আলোচনা ও মতামত নিয়েছেন।
ওসি হাসান আলীর কাছে জানতে চাওয়া হয়, পিয়াস সরকার গ্রামে আসার আগে আপনার কার্যালয়ের জন্য দুই টন ওজনের এসি ও দুই সেট সোফা উপহার দিয়ে এসেছেন এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ প্রসঙ্গে আপনার মন্তব্য কি জানতে চাইলে সে কিছুক্ষণ নিশ্চুপ থেকে বলেন, আপনারা এমন প্রশ্ন করেন, তাতে কি বলবো। বিষয়টি পুলিশ সুপারকে জানাবো বলার পর ওসি হাসান আলী মুঠোফোনের সংযোগ কেটে দেন।
গজারিয়া থানা পুলিশের তথ্যমতে, নৌ ডাকাত পিয়াসের বিরুদ্ধে, হামলা, নৌ-ডাকাতিসহ হত্যা বিভিন্ন অপরাধে একাধিক মামলা রয়েছে।
এবিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফিরোজ কবির সত্যতা স্বীকার করে বলেন, পিয়াস এলাকায় কিছু লোক নিয়ে এসেছিলো৷ খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে গেলে আগেই সে পালিয়ে যায়।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ২৫ আগষ্ট নৌ ডাকাত নয়ন-পিয়াস এর নেতৃত্নে বাহিনীর সদস্যরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করে ও ককটেল নিক্ষেপ করে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। এতে পুলিশ পাল্টা গুলি চালালে দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়ে যায়। এ সময় নৌ ডাকাতরা পুলিশকে লক্ষ্য করে শতাধিক রাউন্ড গুলি ছুড়ে। পরে অবস্থা বেগতিক দেখে আত্মগোপনে চলে যায়।
এ ঘটনার পরদিন ২৬ আগষ্ট পুলিশ ও যৌথবাহিনীর সদস্যরা জলে স্থলে অভিযান চালালেও অধরা থেকে যায় আলোচিত নৌ-ডাকাত পিয়াস। এ ঘটনার ১২ দিন পর ৬ সেপ্টেম্বর অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প পরিদর্শনে আসেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।